'ব্লু-ইকোনমি, আগামী অর্থনীতির বিশ্বস্ত সহযোগী '
শব্দটা যখন ব্লু-ইকোনমি তখন সেটা অনেকের কাছে অপরিচিত মনে হতে পারে। কিন্তু এই পরিচিত শব্দটিই ভবিষ্যতে প্রায় সকলের কাছেই নিত্যদিনের সাধারণ শব্দ হয়ে উঠতে পারে।
ব্লু-ইকোনমি শব্দটি দ্বারা সমুদ্র সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিকে বুঝায়। বাংলাদেশ ব্লু-ইকোনমির সম্ভাবনাময় এই পথে বেশিদূর হাটতে পারেনি।তবে ব্লু-ইকোনমির হাত ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা যে আরও গতিশীল হবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।এই পর্বে আমরা ব্লু-ইকোনমি ও এর সাথে বাংলাদেশে এর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব।
ব্লু-ইকোনমি দ্বারা সমুদ্র-সম্পদনির্ভর অর্থনীতিকে বুঝায়।সাগরের বিশাল জলরাশির নিচে লুকিয়ে আছে হাজারো গুপ্তধন। বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতি যদি সঠিক পথে এগিয়ে নিতে হয় তবে ব্লু-ইকোনমির দিকে নজর দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল সমুদ্রসীমা।আমাদের সমুদ্র-সম্পদ প্রায় অব্যবহৃতই রয়ে গেছে।তাই এই অমূল্য সম্পদ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি অকল্পনীয় ভাবে বদলে দিতে পারে।
বর্তমান পৃথিবীর ৪৩০ কোটির ও বেশি মানুষের ১৫ ভাগেরও বেশি প্রোটিনের চাহিদা মেটাচ্ছে সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণী। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ প্রোটিনের অন্যতম উৎস বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কেবল মাছ বিক্রি করেই বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে।তাছাড়া বিশ্বের যেকোন দেশের জন্য সমুদ্রের অন্যান্য সম্পদ ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কারণ যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে পর্যাপ্ত সম্পদের যোগান দিতে ব্লু-ইকোনমির বিকল্প কমই আছে।
স্থলভাগ থেকে সম্পদ আহরন চলছে সেই প্রাচীন কাল থেকেই। তাই স্থল-সম্পদের পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে। তাই এখন সম্পদের নতুন উৎসের খুজে পুরো বিশ্ব।
ব্লু-ইকোনমি যেকোন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য খুবই অনুকুল।বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান "সেভ আওয়ার সি"-র তথ্যমতে কেবল সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। গভীর সমুদ্র হতে যে টুনা মাছ আহরন করা হয় তা সারাবিশ্বে খুবই জনপ্রিয়। এটি যেমন সুস্বাদু তেমন স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। দেশের আন্তর্জাতিক মানের হোটেল গুলো এ মাছ আমদানি করে থাকে।সঠিকভাবে এ মাছ আহরন কেবল দেশের চাহিদাই মিটাবে না, রপ্তানি করা যাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
সারাবিশ্বেই ব্লু-ইকোনমি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।এ খাত বৈশ্বিক বেকারত্বকে অনেক কমিয়ে আনবে।তবে এর জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আবশ্যক।যেমন: ইন্দোনেশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে ব্লু-ইকোনমি নিয়ে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।এগুলো বাস্তবরূপ পেলে সমুদ্র হতে আহরিত সম্পদের মূল্যমান দেশটির জাতীয় বাজেটের ১০ গুন হবে।তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া এই ব্লু-সিস্টেম থেকে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে থাকে।
সমুদ্র-সম্পদের বাজার মূল্য যেমন অনেক বেশি তেমন এতে বৈচিত্র্যতাও অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, কমপক্ষে ৫০০ প্রজাতির মাছই আছে সমুদ্রে এছাড়া শামুক, ঝিনুক, অঅক্টোপাস, কাকড়া, হাঙ্গরসহ হাজার হাজার অর্থকরী প্রাণীত রয়েছেই। এই প্রাণী সম্পদ ছাড়াও আছে মূল্যবান বালু,থোরিয়াম ও ইউরেনিয়ামের মতো অতি মূল্যবান ধাতু যাতে মিশে অছে ম্যাগনেটাইট, জিরকন, রুটাইল, ইলমোনাইটের মতো মূল্যবান আকরিক।
এখন প্রশ্ন তো এই যে, এত মূল্যবান সম্পদ আহরনে কতটা সক্ষম আমরা?
এসডিজির ১৪ নম্বর ধারায় টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক সম্পদের অনুসন্ধান ও এর যথাযথ সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির এ লক্ষ্য পূরণে তাই ব্লু ইকোনমিকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
ব্লু ইকোনমি নিয়ে দরকার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। এখাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এ খাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বঙ্গপসাগরের বিশাল জল সীমায় বাড়াতে হবে অনুসন্ধানী কার্যক্রম। আমাদের সমুদ্র নিয়ে খুব বেশি গবেষণা ও হয় নি।
তবে অনুসন্ধান কার্যক্রমে গতি আনতে পারলে এ খাতকে সফলতার শিখরে পৌছানো সম্ভব।
সমুদ্র বিষয়ক অর্থনীতি নিয়ে ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীও চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। তাছাড়া সম্ভাবনাময়ী এ খাতে সমঝোতা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে চীনও। আগ্রহ দেখিয়েছে জাপানও। তাছাড়া ইতোমধ্যেই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহে উপকূলীয় অঞ্চলে নির্মাণ হচ্ছে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পর্যাপ্ত সুবিধা দিতে পারলে আসবে বিদেশী বিনিয়োগ ও।তাছাড়া ব্লু-ইকোনমির সাথে জড়িয়ে আছে পর্যটন শিল্পও।যা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিবে এ খাতকে। এক কথায় এ খাতকে বলা যায় "A complete natural system for economical revolution "।
এখন শুধু প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও এর যথাযথ বাস্তবায়ন। তবেই আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দেবে ব্লু-ইকোনমির এই অসাধারণ কাঠামোটি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন