প্রাণ সৃষ্টির রহস্য উন্মোচনে, ( সবই কি কাকতালীয় না কি আছে স্রষ্টার হস্তক্ষেপ?)
অস্তিত্ব এমন একটা শব্দ যা কোনো সত্তার অতীত বা ভবিষ্যতকে নির্ধারণ করে দেয়।সৃষ্টি শব্দের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে আছে এই শব্দটি।
সৃষ্টি রহস্যের এই পর্বগুলোতে আমরা আলোচনা করব পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব ও এর উদ্ভব নিয়ে।
প্রাণ সৃষ্টির রহস্য আজও পুরোপুরি উন্মোচিত হয় নি।তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু অনুমান ও গবেষণা সম্ভব হয়েছে তা থেকে সেই রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব নয়। প্রথম বিষয় হলো বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত প্রাণ কি তার সংঙগা দাড় করাতে পারে নি। প্রাণ মানে কি নিজ থেকে কাজ করার ক্ষমতা নাকি নিজ অস্তিত্ব দিয়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর প্রভাব তৈরি করা।নাকি প্রাণ তাই যা নাইট্রোজেন গঠিত ক্ষার তা DNA বা RNA বহন করে।প্রকৃতপক্ষে কোন সঙগাই সার্বজনীন ভাবে প্রযোজ্য হয় না।কারণ এতে অনেক জীবকে জড় বলতে হয় আবার অনেক জড় পদার্থকে জীব বলতে হয়।
যেমন নিউক্লিক এসিড ও প্রোটিন যখন এক করা হয় তখন যে সত্ত্বার উদ্ভব হয় তাকে আমরা সাধারণত ভাইরাস বলি।কিন্তু যখনই এই দুই উপাদানকে পৃথক করা হয় তখন ভাইরাস বলতে আর কিছুর অস্তিত্ব থাকে না।কিন্তু এই অস্তিত্ব তৈরি হয়েছিল দুটো জড় পদার্থের মিশ্রনে।আদতে একে প্রান বলা যায় কি না তাও এক প্রশ্ন হয়ে দাড়ায়।এটা একটা উদাহরণ মাত্র।অর্থাৎ শুরুতেই যে বলেছিলাম সৃষ্টির অতীত বা ভবিষ্যত নির্ধারণ হয় এর অস্তিত্ব দ্বারা।
এখন এই অস্তিত্বের দাবি করতে পারা সত্ত্বার উদ্ভব কখন কিভাবে হয়েছিল ?
বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে আমরা জানতে পেরেছি যে, সৃষ্টির শুরুর সময় পৃথিবী বসবাসের উপযোগী ছিল না। পরে বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাস যোগ্য পৃথিবী প্রানের অস্তিত্ব ধারণ করবে বলে গড়ে ওঠে। প্রাণ সৃষ্টির যে কাঁচামাল প্রয়োজন তা যে পৃথিবীর বাহির থেকে এসেছে তা একরকম নিশ্চিতই।কারণ পৃথিবীতে এসব উপাদানের অস্তিত্ব সৃষ্টির শুরুর সময়টাতে ছিল না। এখন বাহির হতে কোন মহাজাগতিক বস্তু ( যেমন উল্কাপিণ্ড) হয় এই কাঁচামাল তথা নাইট্রোজেন, কার্বন ইত্যাদি না হয় নিয়েই আসল।ধরে নিলাম DNA অনু পর্যন্ত এসব উপাদান হতে তৈরি হয়েছে, যা নিজে অনুলিপিত হয়ে হাজার হাজার অনু তৈরি করতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো দৈব ভাবে কোন রকম হস্তক্ষেপ ছাড়া কিভাবে এই জটিল অনু এত নিখুঁত ভাবে তৈরি হলো।
এরকম শুধুমাত্র উপাদানের উপস্থিতিতেই কি এমন অনু তৈরি হওয়া সম্ভব?
যারা গণিতের সম্ভাবণা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তারা হয়তো ব্যাপারটা অনুমান করতে পারছেন। যদি কোন প্রাণীর DNA- র একটিমাত্র অনুক্রম বদলে ফেলা হয় বা বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তার পুরো জীবন চক্রই শেষ হয়ে যাবে অথবা এতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে।এখানে আরেকটা বিষয় আছে সম্ভাবনার সাথে এখানে পারমুটেশন বা বিন্যাস পদ্ধতি ও জড়িত। প্রাণ সৃষ্টির উপাদান গুলো বিভিন্ন ভাবে বিন্যস্ত হতে পারে। অর্থাৎ এ রকম সম্ভাবনা তো ১ শতাংশ ও নেই যেখানে DNA অনু গঠনে সঠিক বিন্যাসটিই তৈরি হবে। কারণ DNA অনুতে নাইট্রোজেন গঠিত ক্ষারগুলোর হাজার ভাবে বিন্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এখানেই শেষ নয় এরকম কয়েকটা অনু একটি চেইন তৈরি করে। এখন এই কয়েকটা অনু যখন চেইন তৈরি করবে তখনও হাজারটা বিন্যাস সম্ভব।সেখানে এতই কাকতালীয় বা অলৌকিক কিছু ঘটে গেল যে, প্রাণ সৃষ্টির অনুকুল চেইনটিই তৈরি হলো। যারা সম্ভাবনা ও বিন্যাস নিয়ে অল্প বিস্তর পড়াশোনা করেছেন তারা এতক্ষণে ব্যাপারটা হয়তো বুঝে গেছেন।
অপনি যদি নিজ সত্তার সাথে এককোষী জীবের তুলনা করেন তবে আপনাকে একটু অবাকই হতে হবে। কারণ বিবর্তনকে শতভাগ সঠিক ধরে নিলেও অনেক গুলো প্রশ্ন তৈরি হয়।
এই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে উন্নত জীব সৃষ্টিতে সব সময়ই কেন সঠিক বিন্যাসটিই তৈরি হলো ?
এখানে তো একবার হলেও ব্যাতিক্রম ঘটতে পারত।প্রকৃতপক্ষে এককোষী জীব হতে বিবর্তনের লক্ষ লক্ষ পথ হতে পারে। সেখানে বার বার এমন অলৌকিক ঘটনা ক্রমেই ঘটতে থাকল যে, প্রাণ সৃষ্টির একদম রাসায়নিক জড় পদার্থ থেকে শুরু করে প্রথম প্রাণ সৃষ্টি তারপর এককোষী জীব ও এর ক্রমবিকাশ সবসময়ই সঠিক পথে সঠিকভাবে ঘটতে থাকল।
এখন গোড়ার প্রশ্ন হলো ক্রমবিকাশ তো অনেক পরের বিতর্ক রাসায়নিক অণুগুলোরই কি সঠিকভাবে বিন্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ?
প্রাণ সৃষ্টির ব্যাখ্যায় যত গবেষণা আছে তাতে এ বিষয়টি প্রায়ই উপেক্ষিত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে DNA অনু বা তার চেইন পর্যন্ত কাল্পনিক ভাবে ধরে হয়েছে যে, এগুলো রাসায়নিক উপাদানের সঠিক বিন্যাসেরই ফল।এরপর থেকেই ব্যাপারটা এগিয়ে গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভাবতে হবে প্রানীর বিবর্তন সত্য হলেও প্রাণ সৃষ্টির রাসায়নিক অণুগুলোর অনুক্রমেই কি তা ঘটেছিল ? এই প্রশ্ন অনেক জটিল হলেও এর উত্তর আমাদের সঠিক পথে এগিয়ে যেতে অনেক সাহায্য করবে।
আমরা এই পর্বে প্রাণ সৃষ্টির রহস্যের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করলাম।পরের পর্বগুলোতে এ সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি প্রশ্ন এবং তার সম্ভাব্য সমাধানের পথ নিয়ে আলোচনা করব।তবে প্রাণ সৃষ্টির রহস্যে ডুব দেওয়ার আগে এর ভূমিকা ও এর চ্যালেঞ্জ গুলো বুঝা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরের পর্বগুলোতে আমরা এর মূলবিষয়ে নিয়ে আলোচনা করব।
খুব সুন্দর চিন্তা আপনার, চালিয়ে যান।
উত্তরমুছুন